দীর্ঘ দশ মাস পর দেশে ফিরেছেন চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তী নায়িকা শবনম। মূলত গেলো বছরের শেষপ্রান্তে তিনি তার সিনেমা জীবনের দীর্ঘদিনের কর্মস্থল পাকিস্তানে গিয়েছিলেন কয়েকটি টিভি শো’তে অংশগ্রহন করতে এবং একটি বিজ্ঞাপনের কাজ করতে। সব কাজ শেষ করে জুন মাসে দেশে ফেরার কথা থাকলেও পরবর্তীতে সারা বিশ্বে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানে এবং বাংলাদেশে দুই দেশে যথারীতি লকডাউন দেয়া হয়। পাকিস্তানের সকল ফ্লাইট বাতিল করা হয়।
অবশেষে নানান জটিলতা পেরিয়ে গেলো ২৬ সেপ্টেম্বর শবনম দেশে ফিরেছেন। রাজধানীর বারিধারা পার্ক রোডে গতকাল তার বাসাতেই অনেকদিন পর দীর্ঘ সময় পাকিস্তানে নিজের অনিচ্ছায় থেকে আসার পর দেশে ফেরা নিয়ে শবনম বলেন,‘ সত্যি বলতে কী দেশে’তো আমার একমাত্র ছেলে রনি’ই থাকে। আপন বলতে আর কেউই নেই এখন। এক মামা ছিলেন, তিনিও মারা গেছেন। একমাত্র বোন কলকাতায় থাকেন। তারসঙ্গে দীর্ঘদিন দেখা নেই। করোনার কারণে কলকাতাতেও আর যাওয়া হয়নি। পাকিস্তানে যদিও বা কাজে গিয়েছিলাম, কিন্তু কাজ শেষে সেখানে এতোটা সময় ধরে অযথাই থাকাটা আমার কাছে খুব খারাপ লাগছিলো। শুধু অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম কবে দেশে ফিরবো, কবে দেশে ফিরবো। শেষ পর্যন্ত ফ্লাইট চালু হবার সাথে সাথেই দেশে ফিরলাম।
নিজ দেশের মাটিতে পা রেখে বুকের ভেতর কী যে ভালোলাগা ছুঁয়ে গিয়েছিলো তা ভাষায় প্রকাশের নয়। নিজ দেশের মাটি, নিজ দেশের আকাশ, বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবার মধ্যে এক অন্যরকম সুখ কাজ করে, ভালোলাগা কাজ করে। অনেকদিন পর দেশে ফিরে মনে হচ্ছে আমি আমার হারিয়ে যাওয়া নিজেকে খুঁজে পেয়েছি। একমাত্র ছেলে রনি’ই আমার দেখভাল করছে।’ শবনম জানান, পাকিস্তানে থাকার সময়ই অনেকেই নতুন নতুন সিনেমায় কাজ করা নিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে শবনম বলেন,‘ আমি সবসময়ই যেটা বলে এসেছি-আজও সেটাই বলছি যে , গল্প যদি মৌলিক হয় এবং আমার চরিত্রটি যদি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়-তাহলে অবশ্যই আমি অভিনয় করবো। আমি মনেকরি শিল্পীদের জীবনের কোন অবসর নেই। আজীবন তারা অভিনয় করে যেতে পারেন যদি শরীর ভালো থাকে এবং পরিবারও সাপোর্ট দেয়। ভালো গল্প হলে অবশ্যই আমি কাজ করবো।’ শবনম সর্বশেষ বাংলাদেশে কাজী হায়াৎ’র পরিচালনায় ‘আম্মাজান’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। এরপর আর নতুন কোন সিনেমায় অভিনয় করেননি তিনি। তার স্বামী রবিন ঘোষ ছিলেন একজন প্রখ্যাত সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক।
বাংলাদেশে শবনম অভিনীত শুরুর দিকের সিনেমা হচ্ছে ‘আসিয়া’,‘ এদেশ তোমার আমার’,‘ কখনো আসেনি’.‘ তানহা’, ‘বিষকন্যা’, এসব সিনেমাতে তিনি ঝর্না নামে অভিনয় করেন। তবে নায়িকা হিসেবে শবনম হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয় ‘হারানো দিন’ সিনেমাতে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে। মুস্তাফিজ পরিচালিত এই সিনেমাটি ১৯৬১ সালে মুক্তি পায়।
Leave a Reply